ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার ১৬টি কার্যকর উপায়
গ্যাস্ট্রিক, এসিডিটি বা অম্বলের সমস্যায় ভুগছেন? জেনে নিন ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়। আজ আমরা জানবো ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার প্রাকৃতিক ও নিরাপদ ১৬টি কার্যকর উপায় সম্পর্কে। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করুন এবং প্রতিদিনের জীবনযাপনে আনুন স্বস্তি।
আপনি যদি গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটি সমস্যায় ভুগে থাকেন এবং এর থেকে মুক্তির উপায় খুঁজেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্যই।
পোস্ট সূচীপত্রঃ ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়
- ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়
- কিছু গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস যা গ্যাস্ট্রিক কমাতে সাহায্য করে
- গ্যাস্ট্রিক কমাতে প্রতিদিন আদা চা খান
- তুলসী পাতা খেলে দূর হবে গ্যাস্ট্রিক
- হজমে সহায়ক দারুচিনি গ্যাস্ট্রিক কমায়
- জিরা পানি পেটে জমা গ্যাস দূর করে
- গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর করতে প্রতিদিন খান এলাচ
- ধনে পাতার রস গ্যাস্ট্রিকের জন্য উপকারী
- মেথি অ্যাসিড কমিয়ে পেট হালকা রাখে
- পুদিনা পাতা পেটে জমা গ্যাস দূর করে
- মধু ও লেবু পানি গ্যাসের সমস্যা কমায়
- ঠান্ডা দুধে গ্যাস্ট্রিক ও জ্বালাপোড়া দূর হয়
- হজমে সহায়ক কলা গ্যাস্ট্রিক কমায়
- পেঁপে খেলে সহজে খাবার হজম হয়
- নারকেল পানি পেট ঠান্ডা রাখে এবং অ্যাসিড কমায়
- গ্যাস্ট্রিক কমাতে ফাইবারযুক্ত খেজুর খান
- গরম ভাতের মাড় গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি দেয়
- পান্তা ভাতে গ্যাস্ট্রিক কমে হজম হয় সহজে
- কবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন?
- অনুরোধ
ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়
বর্তমান সময়ে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় সম্পর্কে জানা। কারণ গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি সাধারন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে যা প্রত্যেকেই কোন না কোন সময় অনুভব করে থাকি। এটি পেটে অতিরিক্ত এসিড উৎপন্ন হওয়ার কারণে হয়ে থাকে। যার ফলে বুক জ্বালাপোড়া করে, বমি বমি ভাব হয়, পেটের বিভিন্ন অংশে ব্যথা হয়, এছাড়া আরও বিভিন্ন লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। অনিয়মিত খাদ্যাভাস, বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, অতিরিক্ত ঝাল বা ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার খাওয়ার অভ্যাস, অতিরিক্ত উদ্বেগ কিংবা মানসিক চাপের কারণে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। তবে আশার কথা হল কিছু সহজ এবং ঘরোয়া উপায়ে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাহলে চলুন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক—
গ্যাস্ট্রিক কমাতে প্রতিদিন আদা চা খান
ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় হল আদা চা, এটি সবচেয়ে সহজ। কারণ আমরা প্রায় প্রতিদিন একবার হলেও চা পান করি আর প্রতিদিনের এই চায়ের সাথে এক টুকরো আদা মিশিয়ে নিলে সেটি হয়ে ওঠে স্বাস্থ্যকর।
চা শরীরকে সতেজ করে আর মনে এনে দেয় প্রশান্তি। আদা যেমন রান্না ঘরে খাবারের স্বাদ বাড়ায় তেমনি এটি চায়ের সাথে যুক্ত করলে স্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে। আদা হজম শক্তি বাড়ায় এবং পেটের গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। প্রকৃতির এই উপাদান যেমন যাদুকরি মসলা হিসেবে কাজ করে খাবারের স্বাদ বাড়াতে তেমনি এর মাঝে লুকিয়ে আছে স্বাস্থ্যকর জীবনের রহস্য।
আদা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি, লালা নিঃসরণ বৃদ্ধি, স্ট্রেস কমানো সহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- প্রথমে এক টুকরো আদা নিয়ে ভালোভাবে থেতলে নিন।
- একটি পাত্রে পরিমাণ মতো পানি নিয়ে থেতলানো আদাগুলো দিন।
- পাঁচ থেকে দশ মিনিট পানি ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন।
- এরপর চুলা থেকে নামিয়ে অল্প ঠান্ডা করে কুসুম গরম অবস্থায় লেবুর রস অথবা মধু মিশিয়ে পান করুন।
- রং চায়ের সাথেও আদা মিশিয়ে খেতে পারেন।
তুলসী পাতা খেলে দূর হবে গ্যাস্ট্রিক
পেটের সমস্যা সমাধানে তুলসী পাতা একটি কার্যকরী প্রাকৃতিক উপাদান। এটি আমাদের পেট ব্যথা অম্বল এমনকি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে দারুন ভাবে সাহায্য করে। তুলসী পাতায় আছে এন্টি এসিড গুনাগুন। এটি হজমের সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, পেটের আলসার এমনকি হাইপার এসিডিটি দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- ৩-৪ টি তুলসী পাতা চিবিয়ে খান।
- এক কাপ পানিতে ৫-৬ টি তুলসী পাতা ফুটিয়ে পানি অর্ধেক হয়ে আসলে পান করুন।
- চাইলে সঙ্গে মধু মিশেও পান করতে পারেন, এতেও আরাম মিলবে।
হজমে সহায়ক দারুচিনি গ্যাস্ট্রিক কমায়
দারুচিনি একটি ভেষজ গুনাগুন সমৃদ্ধ উপাদান, এটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। দারুচিনি প্রাকৃতিক এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান সম্পন্ন হওয়ায় হজম ক্ষমতাকে শান্ত করে অস্বস্তিবোধ দূর করতে সহায়তা করে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- ফুটন্ত গরম পানি অথবা চায়ের সাথে দারুচিনি গুড়া মিশিয়ে পান করতে পারেন।
- রান্নার সময় দারুচিনি ব্যবহার করলে খাবারের স্বাদ বাড়ার পাশাপাশি হজম প্রক্রিয়াতেও সাহায্য করে।
জিরা পানি খেলে হজম ভালো হয়
গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটি মোকাবেলায় সাহায্য করতে পারে আপনার রান্নাঘরের ছোট্ট উপকরণ জিরা। এটি ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে অনন্য। গবেষণা বলছে পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে জিরা পানি একটি কার্যকরী উপাদান। এটি বদহজম, এসিডিট, পেট ফাঁপা থেকে মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি পেট পরিষ্কার করতেও সহায়তা করে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ জিরা সারারাত ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে পানিটুকু ছেঁকে নিয়ে পান করতে পারেন।
- এক কাপ পানি ফুটিয়ে আধা চামচ জিরা মিশিয়ে তা ছেঁকে নিয়ে ঠান্ডা করে হালকা কুসুম গরম অবস্থায় পান করতে পারেন।
- এক গ্লাস হালকা কুসুম গরম পানিতে আধা চা চামচ ভাজা জিরার গুড়া মিশিয়ে পান করতে পারেন।
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর করতে প্রতিদিন খান এলাচ
রান্নায় স্বাদ এবং ঘ্রাণের অনন্য মাত্রা আনতে যেমন এলাচ ব্যবহৃত হয় তেমনি শরীরের নানা রোগ প্রতিরোধ করতেও এলাচের ব্যবহার হয়। এলাচ পেট ঠান্ডা রাখে, পেট ফাঁপা কমায়, বদহজম দূর করে, এসিডিটি কমায় এবং হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- একটি এলাচ গুঁড়ো করে এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারে না।
- প্রতিদিন খাবার পর একটি করে এলাচ চিবিয়ে খেলে পেটের গ্যাস কমে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।
ধনেপাতার রস গ্যাস্ট্রিকের জন্য উপকারী
ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় এর মধ্যে ধনেপাতা একটি কার্যকরী উপাদান। ধনেপাতা হচ্ছে সুগন্ধি মসলা জাতীয় এবং ঔষধি উদ্ভিদ, ধনেপাতায় এগারো জাতের এসেনশিয়াল অয়েল থাকে।প্রাকৃতিক তেল থাকার ফলে এই ধনেপাতা খেলে আমাদের খাবার ভালোভাবে হজম হয় এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে। ধনেপাতা খেলে আমাদের শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে থাকে এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে থাকে কারণ ধনেপাতা হচ্ছে কোলেস্টেরল শূন্য। ধনে পাতার নানা ঔষধি গুনাগুন আছে তাই শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে স্বাদ নিন ধনেপাতর।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- প্রতিদিন কিছু পরিমাণ ধনেপাতা চিবিয়ে বা সালাদের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
- ধনেপাতা পিষে রস করে হালকা গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
- ধনে পাতার রস ফুটিয়ে চা করে খেতে পারে।
- খাবার বা তরকারির সাথে ধনেপাতা কুচি করে ব্যবহার করতে।
মেথি অ্যাসিড কমিয়ে পেট হালকা রাখে
আমরা প্রায় প্রত্যেকেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগি আর এজন্য প্রায় সকলেই ঔষধ এর উপর নির্ভরশীল। আমাদের আশেপাশে এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান আছে যেগুলো খেলে সহজেই গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার তেমনি একটি কার্যকরী উপাদান মেথি। মেথি হজম শক্তি বাড়ায় এবং পেটে অতিরিক্ত গ্যাস উৎপন্ন হওয়া রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- এক থেকে দুই চামচ মেথির বীজ এক গ্লাস পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে পান করলে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।
- শুকনো মেথি গুঁড়ো করে এক চা চামচ হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন, স্বাদ বাড়াতে সাথে মধু অথবা লেবুর রস মিশাতে পারেন।
- এক চা চামচ মেথির গুড়া এক কাপ পানির সাথে মিশিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ভালোভাবে ফুটিয়ে চা হিসেবে পান করতে পারেন।
- মেথির বীজ এবং পাতা উভয় খাবারের সাথে যোগ করে খেতে পারেন।
পুদিনা পাতা পেটে জমা গ্যাস দূর করে
পুদিনা পাতা একটি আয়ুর্বেদিক ঔষধ এবং সুস্বাদু খাবার। অনিয়মিত খাদ্যাভাস এবং
অতিরিক্ত তেল চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণের কারণে আমরা প্রায় গ্যাস্ট্রিকের
সমস্যায় ভুগে থাকি। ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় এর জন্য একটি
প্রাকৃতিক উপাদান পুদিনা পাতা। পুদিনা পাতা পেট ফোলা বা পেট ফাঁপা, পেটের
অস্বস্তি, হজমের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি পেটে আটকে থাকা গ্যাস বের হতে সাহায্য
করে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- গরম পানিতে পুদিনা পাতা ফুটিয়ে চা করে খেলে হজম শক্তি বাড়ে।
- পুদিনা পাতা চিবিয়ে বা রস করে খেলে পেটের অস্বস্তি কমে।
- বিভিন্ন খাবারের সাথে পুদিনা পাতা মিশিয়ে খেলে হজম ভালো হয়।
- পুদিনার তেল বদহজম দূর করতে সহায়তা করে।
মধু ও লেবু পানি গ্যাসের সমস্যা কমায়
গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটির সমস্যা যেমন আমাদের কাছে এখন খুবই সাধারণ একটি সমস্যা তেমনি এই সমস্যার জন্য ওষুধ খাওয়াটাও আমাদের জন্য খুবই সাধারণ একটি ব্যাপার। কিন্তু আমরা চাইলে ওষুধ ছাড়াও ঘরোয়া কিছু টোটকার মাধ্যমে গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটি দূর করতে পারি খুব সহজেই।
মধু এবং লেবু পানি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
লেবুর রস হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করে এবং মধু পেটের প্রদাহ কমাতে
সাহায্য করে। দুটি একসঙ্গে মিশিয়ে খেলে গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি সমস্যা দূর
হয়। এছাড়া মধু ও লেবুর রস একসঙ্গে খেলে ক্ষুধা কম লাগে যার ফলে শরীরের ওজন
কমতেও সাহায্য করে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- এক কাপ হালকা কুসুম গরম পানি নিন;
- ১-২ চামচ লেবুর রস এবং ১ চামচ মধু নিন;
- ভালোভাবে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে পান করুন।
ঠান্ডা দুধে গ্যাস্ট্রিক ও জ্বালাপোড়া দূর হয়
ঠান্ডা দুধ গ্যাস্টিক সমস্যা দূর করার জন্য দারুন ভাবে উপকারী, ঠান্ডা দুধ
বুক এবং পেটের জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে। কিছু ক্ষেত্রে ঠান্ডা
দুধ পাকস্থলীতে এসিডিটির পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। ঠান্ডা দুধ হজম হতে
বেশি সময় লাগায় কিছু মানুষের জন্য এটি সমস্যার কারণ হতে পারে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- গ্যাস্ট্রিক সমস্যার জন্য ঠান্ডা দুধ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পান করা উচিত।
- ১ গ্লাস দুধ ভালভাবে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে ধীরে ধীরে পান করুন।
হজমে সহায়ক কলা গ্যাস্ট্রিক কমায়
কলায় থাকা প্রাকৃতিক এন্টাসিড হজম ক্ষমতাকে স্বাভাবিক রেখে পেটের এসিডিটি কমাতে
সাহায্য করে। কলা পেটের ফাঁপা ভাব কমাতে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর
করে, হার্ট সতেজ এবং সবল রাখে, শরীরের সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের ভারসাম্য
রক্ষা করে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে কর্ম ক্ষমতা বাড়াতে
সাহায্য করে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- খাওয়ার পর বা সকালে খালি পেটে খেতে পারেন।
- গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেশি হলে দিনে অন্তত .২-৩ টি কলা খান।
- কলা খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
পেঁপে খেলে সহজে খাবার হজম হয়
কাঁচা পেঁপে শরীরে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ সরবরাহ করে, এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন। পেটের নানা সমস্যা দূর করতে পেঁপে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। গ্যাস্ট্রিক বা বদহজম দূর করতে কাঁচা পেপের কোন তুলনা নেই। কাঁচা পেঁপে বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটের আলসার, গ্যাস্ট্রিক, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, অন্ত্রের সমস্যা দূর করা সহ শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি এবং চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- প্রতিদিন দুপুর ও রাতে খাবার পর এক টুকরো কাঁচা পেঁপে চিবিয়ে খেতে পারেন।
- কাঁচা পেঁপে জুস করে খেতে পারেন, কাঁচা পেপের জুস রক্তের চিনির পরিমাণ কমায়।
- যাদের পেটে গোলমাল দেখা দেয় তারা কাঁচা পেঁপের সালাদ খেতে পারে না।
নারকেল পানি পেট ঠান্ডা রাখে এবং অ্যাসিড কমায়
নারকেল বা ডাবের পানি পেটের এসিডিটি কমাতে সাহায্য করে। নারকেল পানি হজম
প্রক্রিয়াকে সহজ করে পেট ঠান্ডা রাখে, শরীরে পানির অভাব পূরণ করে
ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে, শরীরে বিভিন্ন রকম পুষ্টির যোগান দেয় এবং
এসিডিটি নিয়ন্ত্রণ করে। নারকেল পানিতে ক্যালোরি ও ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকায়
এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া নারিকেল পানি ত্বকের নানা উপকারে কাজে
আসে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- শরীর সুস্থ এবং সতেজ রাখতে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে বাঁচতে প্রতিদিন এক থেকে দুইবার নারকেল পানি খাওয়া উচিত।
গ্যাস্ট্রিক কমাতে ফাইবারযুক্ত খেজুর খান
সভ্যতার ইতিহাসে খেজুর সুমিষ্ট এবং খুবই পুষ্টিকর খাবার হিসেবে
পরিচিত। খেজুরে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যুক্ত থাকায় এটি হজম ক্ষমতাকে উন্নতি
করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও খেজুরে থাকা
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। শুনলে অবাক হবেন দিনে
মাত্র দুই থেকে তিনটি খেজুর খেলে আপনি গ্যাসের সমস্যা থেকে অনেকাংশেই মুক্তি
পাবেন।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- গ্যাস অথবা এসইডি সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন কয়েকটি খেজুর খান, তবে অতিরিক্ত খেজুর খেলে এসিডিটি কমার বদলে বেড়ে যেতে পারে। তাই পরিমাণ মতো খেজুর খান।
গরম ভাতের মাড় গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি দেয়
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কমাতে গরম ভাতের মাড় একটি বহুল পরিচিত এবং জনপ্রিয়
ঘরোয়া প্রতিকার। গরম ভাতের মাড় পেটের ভেতরে এসিডিটি শোষণ করে
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি
করে পেটের ভেতরের অস্বস্তি ভাব দূর করে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- ভাত রান্নার পর মাড় গেলে এটি হালকা গরম থাকতে পান করুন।
- দিনে দুই থেকে তিনবার পান করতে পারেন।
পান্তা ভাতে গ্যাস্ট্রিক কমে হজম হয় সহজে
পান্তা ভাত ঠান্ডা ও আরামদায়ক খাবার, এতে রয়েছে ভিটামিন বি ও বি কমপ্লেক্স।
সাধারণ এই খাবারের রয়েছে অসাধারণ গুন, গ্যাস্ট্রিক ও এসিডিটি সমস্যা দূর করতে
পান্তা ভাতের জুড়ি নেই। পান্তা ভাত শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য
করে। নিয়মিত পান্তা ভাত খেলে পেট ঠান্ডা থাকে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা
থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- রাতে ভাত পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে সেটি লবণ এবং পেঁয়াজ দিয়ে খান।
- পান্তা ভাত দিনে একবারের বেশি খাওয়া উচিত নয়।
- খাবারের স্বাদ বাড়ানোর জন্য কাঁচামরিচ, কাঁচা পেঁয়াজ এবং লেবু যোগ করতে পারেন! এটি শরীরের ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর চাহিদা পূরণ করবে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস যা গ্যাস্ট্রিক কমাতে সাহায্য করে
- সময় মত খাবার খাওয়া- অতিরিক্ত সময় না খেয়ে থাকা বা অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস গ্যাস্ট্রিক সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ।
- অল্প অল্প করে খাবার খাওয়া- একবারে একই সাথে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়, এতে পেটের সমস্যা হয়। তাই দিনে ৫-৬ বার অল্প অল্প করে খাবার খান।
- অতিরিক্ত ঝাল এবং তেল চর্বি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন- এ ধরনের খাবার হজম ক্ষমতা ধীরগতি করে দেয় যার ফলে এসিডিটি হতে পারে।
- খাবার ধীরে ধীরে চিবিয়ে খাওয়া- খাবার ধীরে ধীরে চিবিয়ে খেলে সহজেই হজম হতে পারে।
- পর্যাপ্ত পানি পান করা- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে হজমতন্ত্র সুস্থ থাকে।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করা- ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্যাস্ট্রিকের প্রধান ট্রিগার হিসেবে কাজ করে।
- দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ কমানো- দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ ও হজমের বড় শত্রু, মেডিটেশন এর জন্য উপকারী হতে পারে।
কবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন?
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা যদি দীর্ঘমেয়াদি হয় আর নিচের উপসর্গ গুলো দেখা দেয় তাহলে
দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত-
- পেট ফাঁপা ও পেট ভারী অনুভব হওয়া।
- গলা জ্বলা, বুক বা পেট জ্বালাপোড়া করা।
- বমি বা রক্ত বমি হওয়া।
- দ্রুত ওজন কমে যাওয়া।
- খুদা বা খাবার রুচি কমে যাওয়া।
- খাবার খাওয়ার পর অস্বস্তি বোধ করা।
- দুর্গন্ধযুক্ত ঢেকুর উঠা।
- পেট বা বুকে ব্যথা করা।
- মুখে টক বা তিক্ত স্বাদ অনুভব করা ইত্যাদি।
অনুরোধ
এই লেখাটি তথ্যভিত্তিক হলেও এটি কোনো চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন নয়। দীর্ঘস্থায়ী বা জটিল সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লেখকের শেষ কথাঃ ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়
গ্যাস্ট্রিক একটি সাধারন কিন্তু বিরক্তিকর ও যন্ত্রণাদায়ক স্বাস্থ্য
সমস্যা হলেও ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় সমূহ অনুসরণ
করলে সহজেই গ্যাস্ট্রিক নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নিয়মিত
খাদ্যভ্যাস, মানসিক চাপমুক্ত জীবন ও প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার এ
সমস্যার স্থায়ী সমাধান দিতে পারে। আদা, তুলসী, দারুচিনি, জিরা, এলাচ,
ধনেপাতা, মেথি, পুদিনাপাতা, লেবু, মধু, ঠান্ডা দুধ, কলা, পেঁপে, নারকেলের পানি,
খেজুর, ভাতের মাড় এবং পান্তা ভাতের মতো সহজলভ্য উপাদান ব্যবহার করে আমরা সহজেই
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি।
সুস্থ হজমতন্ত্র মানেই সুন্দর জীবন, তাই গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া সমাধান গ্রহণ করুন। আর সমস্যা বেশি দীর্ঘস্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে কুন্ঠিত বোধ করবেন না।
অন্যভিউ ব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url